সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের জন্য যিনি তার দ্বীনের পথে মানুষকে আহ্বানকারীদের অশেষ মর্যাদার কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ
“ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কথায় কে উত্তম যে আল্লাহ্র দিকে মানুষকে আহ্বান করে, সৎকর্ম করে এবং বলেঃ আমি তো আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।” (৪১:৩৩)
অতঃপর দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক প্রিয় নবী (সা) এর উপর যিনি আমাদের আদর্শ এবং যিনি বলেছেনঃ
“যে কেউ কোন ভাল কাজ করলে ভাল কাজে আহ্বানকারী ব্যক্তিও তার সমপরিমাণ পুণ্য লাভ করবে।”
মুসলিমরা জানে আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন তাদেরকে একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামকে তাদের জীবন বিধান হিসেবে দান করে তাদের সম্মানিত করেছেন এবং একই সাথে ইসলামকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আরোপ করেছেন। আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ
(কোরআন) তোমার ও তোমার সম্প্রদায়ের জন্যে তা সম্মানের বস্তু; তোমাদের অবশ্যই এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে।[৪৩:৪৪]
তারা এটাও জানে যে, যদি তারা তাদের ইসলাম প্রচারের এই দায়িত্বকে পালন করে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মেনে চলার ক্ষেত্রে অন্যের হেদায়াতের কারণ হয় তাহলে তারা তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে এমন প্রতিদান প্রাপ্ত হবে যা তারা কল্পনাও করতে পারেনা। এ বিষয়ে আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ
“তুমি বলে দাওঃ আল্লাহ্র এই দান ও রহমতের (কোরআনের) প্রতি সকলেরই আনন্দিত হওয়া উচিৎ; এটা পার্থিব সম্পদ হতে বহুগুণ উত্তম যা তারা সঞ্চয় করেছে।” [১০:৫৮]
এবং প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা) বলেনঃ
“আল্লাহ্ যদি কাউকে হেদায়াত দিয়ে পথ দেখান তাহলে এই হেদায়াত পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার চেয়েও বেশী মুল্যবান।”
এটা আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের এক সুস্পষ্ট অনুগ্রহ যে তিনি তাঁর দ্বীনকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার অগণিত পথ আমাদের সামনে উন্মোচিত করে দিয়েছেন। প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করে তাদের স্রষ্টার কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ নিতে পারেন। মানুষকে ইসলামের পথে দা’ওয়াহ্ দিতে হবে এমন পদ্ধতিতে যা মানুষের কাছে সবচেয়ে সুবিধাজনক এবং গ্রহণযোগ্য। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী একজন দা’ঈকে তাঁর দা’ওয়াহ্র পদ্ধতিও বদলানো লাগবে। আর ঠিক এই কাজটাই করেছিলেন নবী নূহ্ (আ) এবং তাঁর পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ।
একজন দা’ঈর দায়িত্ব হল মানুষকে ইসলামের পথে ডাকার সবরকম পন্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা। এতে করে দা’ওয়াহ্র কাজ করা তার জন্য অনেক সহজ হবে। একজন দা’ঈকে তার নিজ পরিবারের আপনজন থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বাড়ীতে কাজের লোকসহ প্রতিটি মানুষকেই ইসলামের দা’ওয়াহ্ দিতে হবে। তাকে জানতে হবে কোথায়, কখন এবং কিভাবে ইসলামের দা’ওয়াহ্ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ স্থানের তালিকায় থাকবে মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, জেলখানা, পার্ক, সমুদ্র সৈকত, বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র, হাজী ক্যাম্প, আবাসিক হোটেল, এয়ারপোর্ট, বাস টার্মিনাল, কমিউনিটি সেন্টার, শপিং সেন্টার, বাজার এলাকা, অফিস আদালত, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া, খাবার হোটেল-রেস্তরা ইত্যাদি। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমনঃ পাসপোর্ট অফিস, পোস্ট অফিস, পর্যটন কেন্দ্র, বিভিন্ন তথ্য প্রদানকারী সংস্থা ইত্যাদিও তার ইসলামি দা’ওয়াহ্র ক্ষেত্র হতে পারে।
ইসলামের দা’ওয়াহ্র কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে একে অন্যের কর্মদক্ষতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদিকে কাজে লাগিয়ে ইসলামি দা’ওয়াহ্র কাজে নিয়োজিত কর্মীরা আরো দক্ষ এবং সৃজনশীল হয়ে উঠবেন। ফলে দা’ওয়াহ্ কার্যক্রমকে আরো সফলভাবে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। পারস্পারিক উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমের ইসলামের সত্যবাণীকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজ চালিয়ে যেতে হবে। মানুষকে দা’ওয়াহ্ দেয়ার ক্ষেত্রে একজন দা’ঈকে প্রয়োজনীয় সবরকম দা’ওয়াহ্ উপকরণকে কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ইসলাম নিয়ে কাজ করতে আগ্রহীদের নিয়োগ দিয়ে হবে। তাদের সাথে যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি প্রিন্ট করে সেগুলো বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি ইসলামিক সিডি ও ভিসিডির কপি তৈরি করে সেগুলো বন্ধুমহলে এবং চারপাশের মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না কিভাবে ইসলামিক দা’ওয়াহ্র কাজ শুরু করবেন। অনেকেই আবার অজ্ঞতার ওজুহাতে দেখিয়ে কিছু না করেই দিন পার করে যাচ্ছেন। নিচে আমরা ৮০ টিরও বেশী উপায় সম্বলিত একটি পরামর্শ তালিকা দিচ্ছি। পরামর্শগুলো কাজে লাগিয়ে আপনারা সহজেই ইসলামকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবেন ইনশাআল্লাহ্-
পরিবারে দা’ওয়াহঃ
১. পারিবারিক গ্রন্থাগারঃ পরিবারে সকল সদস্যদের বয়স বিবেচনা করে সে অনুযায়ী বাড়ীতে বিভিন্ন ইসলামিক বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা এবং ইসলামিক বক্তাদের লেকচারের সিডি-ভিসিডির একটি সংগ্রহশালা গড়ে তুলুন। আপনার আত্মীয় স্বজনদের বলুন তারা আপনার বাসা থেকে সেগুলো নিয়ে বাসায় পড়তে।
২. ওয়াল পোস্টারঃ বাড়ীতে একটি নির্ধারিত স্থানকে নোটিশ বোর্ডের মত পোস্টার লাগানোর জন্য ব্যবহার করুন। গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক লেকচার, বিভিন্ন প্রোগ্রামের সময়সূচী ইত্যাদি পরিবারের সবাইকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ওয়াল পোস্টারের স্থানটিকে ব্যবহার করুন।
৩. পারিবারিক শিক্ষার আসরঃ পরিবারের সবাই মিলে একসাথে বসে কেউ একজন কোন একটি বই থেকে সকলের উদ্দেশ্যে পড়ুন এবং বাকিরা শুনুন।যেমন কিতাবুত তাওহীদ। এক্ষেত্রে একসাথে বসে ইসলামিক লেকচার শুনতে পারেন অথবা কোরআনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আয়াত এবং গুরুত্বপূর্ণ হাদীসগুলোও মুখস্ত করতে পারেন।
৪. পারিবারিক প্রতিযোগিতাঃ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নানা রকম ইসলামিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করুন যা তাদেরকে ইসলাম মেনে চলার ক্ষেত্রে আরো বেশী অনুপ্রেরণা দেবে। পুরস্কার হিসাবে প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণদের নামসমূহ পারিবারিক সম্মাননা তালিকার শীর্ষে রাখা যেতে পারে। তালিকার শীর্ষে নিজের নাম থাকাটাই তাদের কাছে অনেক বড় পুরস্কার মনে হবে।
৫.পারিবারিক ম্যাগাজিনঃ বাড়ীতে একটি পারিবারিক ম্যাগাজিন প্রকাশের ব্যবস্থা করুন। এতে পরিবারের বিভিন্ন সদস্যরা ইসলাম বিষয়ক বিভিন্ন আর্টিকেল লিখবে। কুরআনের আলো ওয়েবসাইট থেকেও তারা ইসলাম বিষয়ক বিভিন্ন প্রবন্ধ বা ছবি সংগ্রহ করে এই ম্যাগাজিনে প্রকাশ করতে পারে।
৬. ইসলামিক সমাজ কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণঃ সালাত আয়াদের জন্য মসজিদে যাবার সময়, ইসলামিক লেকচার শুনতে যাবার সময় অথবা কোন অসুস্থ কাউকে দেখতে যাবার সময় সাথে আপনার ভাই বা সন্তানদের নিয়ে যান। ইসলামি দাওয়াহ্র কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সংগঠনগুলোতেও তাদেরকে আপনার সাথে নিয়ে যান।
৭. অন্যদের সামনে ভাল কাজঃ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সামনেও কিছু ভাল কাজ করুন যাতে তারা আপনাকে দেখে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তাদের সামনে সালাত আদায় করুন, কোরআন তেলাওয়াত করুন, গরীব দুঃখীদের দান সাদাকা করুন ইত্যাদি।
মসজিদে দা’ওয়াহঃ
৮. দেয়াল ম্যাগাজিনে অংশগ্রহণঃ অধিকাংশ মসজিদের পেছনের দিকের দেয়ালে নোটিশ বোর্ড থাকে যা বিভিন্ন ধরনের ঘোষণা, ইসলামিক পোস্টার ইত্যাদি লাগানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এই নোটিশ বোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পোস্ট করতে পারেন অথবা মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে সচেতন করে এমন তথ্যমূলক পোস্টার কিনে লাগাতে পারেন। কুরআনের আলো ওয়েবসাইট থেকেও আপনারা প্রবন্ধ প্রিন্ট, করে আপনার এলাকার মসজিদে লাগাতে পারেন।
৯. মসজিদের সুযোগ সুবিধা এবং অনুষ্ঠানের উন্নয়নঃ মসজিদে দা’ওয়াতের কার্যক্রম এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মসজিদের পাঠাগার ও হিফয্খানার উন্নয়নের কাজে অংশগ্রহন করুন। দান বাক্সের মাধ্যমেও উক্ত কাজে সহায়তা করতে পারেন।
১০. ইসলামিক বই-পুস্তক এবং অডিও/ ভিডিও সিডি/ডিভিডি সরবরাহঃ বিভিন্ন ইসলামিক কল্যাণমূলক সংগঠন থেকে গুরুত্বপূর্ণ বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা, ইসলামিক লেকচার, প্রামাণ্যচিত্রের অডিও/ভিডিও সিডি/ডিভিডি ইত্যাদি সংগ্রহ করে মসজিদের বিভিন্ন স্থানে রাখুন যাতে মুসল্লিদের দৃষ্টিগোচর হয়। যেমনঃ কোরআনের পাশাপাশি তার একাধিক অনুবাদসহ তাফসীর গ্রন্থগুলো মসজিদের সেলফে রাখা যেতে পারে।
১১. মসজিদে অনুষ্ঠিতব্য আলোচনা অনুষ্ঠান সম্পর্কে লোকজনকে জানানোঃ মসজিদে কখন কোন বিষয়ের উপর লেকচারের আয়োজন করা হয়েছে অথবা কোন সময় কোরআন শিক্ষার ক্লাস অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইত্যাদি জানিয়ে মসজিদের নোটিশ বোর্ড কিংবা দরজায় বিজ্ঞাপন দিন।
১২. লেকচারের আয়োজন করাঃ আপনার পরিচিত বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন আকীদার বক্তাদের লেকচার দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করে মসজিদে নিয়ে আসুন। এক্ষেত্রে অন্যান্য দা’ওয়াহ্ সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে আথবা কুরআনের আলো ওয়েবসাইট থেকেও ভিডিও লেকচার সংগ্রহ করে, প্রোজেক্টরের মাধ্যমে লোকদের দেখানোর ব্যবস্থা করতে পারেন।
১৩. জুম’আর খুৎবা পর্যালোচনাঃ জুম’আর দিন ইমাম যে খুৎবা দেন তার বিষয়বস্তু নিয়ে লোকজনের সাথে পর্যালোচনা করুন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুৎবার প্রাসঙ্গিকতা বিচার করে তা বাস্তবায়নের জন্য লোকদের উৎসাহিত করুন।
১৪. মসজিদ কমিটিতে অংশগ্রহণঃ ইসলামিক দা’ওয়াহ্র পাশাপাশি অন্যান্য কল্যাণমূলক সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কাজ করার জন্য মসজিদ কমিটির কর্মী হিসেবে অংশগ্রহন করুন।
১৫. ইমামের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুনঃ আপনার মসজিদের ইমামের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন। আপনি তাকে Youtube অথবা আমাদের ওয়েবসাইটের বিভিন্ন লেকচার তাকে দেখাতে পারেন বা শোনাতে পারেন। Youtube এ khalifahklothing, shaykha, quraneralo – এই চ্যানেলগুলোতে অনেক ভালো ইংলিশ/বাংলা লেকচার পাবেন। এই লেকচার গুলো তাদের দেখাতে পারেন। তারা এই লেকচার গুলো নিয়ে জুম্মা তে খুৎবা দিতে পারবেন। (উপরের চ্যানেলগুলো দেখার জন্য নির্দিষ্ট চ্যানেলটির উপর ক্লিক করুন)
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দা’ওয়াহঃ
১৫. সকালের পিটি-প্যারেডঃ বিভিন্ন দা’ওয়াহ্ উপকরণ যেমনঃ ইসলামিক বই-পুস্তক, ম্যাগাজিন, লেকচারের অডিও/ ভিডিও সিডি ইত্যাদি প্রস্তুত রাখুন এবং সকালের পিটি প্যারেডে পরিস্থিতি বুঝে কাজে লাগান।
১৬. স্কুলের নোটিশ বোর্ডঃ এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজ এর পাশাপাশি বিভিন্ন ইসলামিক লেকচার, সভা-সেমিনার ইত্যাদির বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য আকর্ষণীয় সব পোস্টার তৈরি করে সেগুলো নোটিশ বোর্ডে লাগিয়ে দিতে পারেন।
১৭. নাট্য কর্মকাণ্ডঃ ইসলামিক ভাবধারা এবং ইসলামিক মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করে এমন নাটক মঞ্চায়নের ব্যবস্থা করুন।
১৮. বক্তৃতা-ভাষণঃ স্কুলে ইসলামের বিশেষজ্ঞ বক্তাদের নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন। অনুষ্ঠানে ছাত্ররা যাতে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপর উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। এতে করে ছাত্ররা তাদের করা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর গ্রহণযোগ্য উত্তর পেলে ইসলাম তাদের কাছে আরো গ্রহণযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে।
১৯. বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানঃ স্কুলের ছাত্র-শিক্ষক এবং কর্মচারীদের নিয়ে বিভিন্ন ইসলামিক এবং শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতার আয়োজন করুন। বিজয়ীদের মাঝে ইসলামিক পুরস্কার বিতরণ করুন। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানগুলোতে দা’ওয়াহ্র গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন প্রবন্ধ উপস্থাপন করুন।
২০. ছাত্রদের স্বার্থরক্ষাঃ ছাত্রদের বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ, পরামর্শ, অভিযোগ ইত্যাদি সংগ্রহ করে সেগুলো স্কুল কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করুন। বিশেষ করে ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে তাদের পূর্ণ সমর্থন ও সহায়তা দিন।
২১. ইসলামিক গ্রন্থাগারঃ স্কুলের সাধারন গ্রন্থাগারকে ইসলাম বিষয়ক বই-পুস্তকের একটি সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে তুলতে “ইসলামিক স্টাডিজ” বিভাগকে সহায়তা করুন। এখানে ইসলামিক সাহিত্যের পাশাপাশি রাসূল (সা) এর সাহাবীদের (রা) এবং ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ মুসলিমদের জীবনচরিতগুলোও যাতে পাওয়া যায় সে ব্যবস্থা করুন।
২২. বিভিন্ন প্রচার-প্রদর্শনীঃ স্কুল কর্তৃপক্ষ আয়োজিত বিভিন্ন বইমেলা, ভিডিও প্রদর্শনী কিংবা বিভিন্ন মাদক বিরোধী প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করুন।
২৩. ইসলামিক সপ্তাহ উদ্যাপনঃ স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করুন যেন তারা বছরে একটি দিন ইসলামিক সপ্তাহ হিসেবে উদ্যাপনের অনুমতি দেয়। এমন অনুষ্ঠানগুলোতে নানা রকম ইসলামিক প্রদর্শনীর আয়োজন থাকবে। ইসলাম সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারনা দূর করে এমন স্লোগান খোচিত আকর্ষণীয় পোস্টার, ক্যালেন্ডার, আরবি ভাষা শিক্ষার সফটওয়্যার, কোরআনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা সম্বলিত সফটওয়্যার, কোরআনের তেলাওয়াত, ইসলামিক লেকচার, প্রামান্যচিত্রের সিডি-ভিসিডি ইত্যাদি হবে প্রদর্শনীর প্রধান আকর্ষণ।
২৪. গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে দা’ওয়াহঃ ছুটিতে পড়াশোনার চাপ কম থাকলে সময়টা কাটাতে পারেন বন্ধুমহলে সামনে ইসলামকে তুলে ধরার মাধ্যমে। তাদের সাথে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করুন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তাদের কি মত তা জেনে নিয়ে ইসলামে এসবের সমাধান কি তা তাদের সাথে শেয়ার করুন।
কর্মক্ষেত্রে দা’ওয়াহঃ
২৫. দা’ওয়াহ্ পোস্টারঃ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপর আকর্ষণীয় ও নজরকাড়া পোস্টার তৈরি করে অফিসের নোটিশ বোর্ডে লাগিয়ে দিন। কোথাও কোন ইসলামিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলে সেটাও বিজ্ঞাপন আকারে নোটিশ বোর্ডে লাগাতে পারেন।
২৬. নিজের বসার টেবিলঃ আপনার অফিসের টেবিলে সবসময় কিছু না কিছু দা’ওয়াহ্ উপকরণ রাখুন। যেমনঃ ইসলামিক পুস্তিকা, ম্যাগাজিন, কোরআনের উপদেশ সম্বলিত পেপার ওয়েট ইত্যাদি। এতে করে আপনার সহকর্মীরা থেকে শুরু করে আপনার ক্লায়েন্টসদের সকলের নজরে পড়বে ব্যাপারটি। ফলে তাদের সাথে মুখের কথা খরচ না করেই অনেকখানি দা’ওয়াহ্র কাজ হয়ে যাবে। আপনাকে দেখে তারাও দা’ওয়াহ্র কাজে উদ্বুদ্ধ হতে পারে।
২৭. ইসলামিক লেকচারের সিডি/ডিভিডি বিতরণঃ সহকর্মীদের চালচলন, কথাবার্তা, বয়স ইত্যাদি বিবেচনা করে তাদের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক লেকচারগুলো বিতরণ করুন। বিশেষ করে এমন
ধরনের লেকচার তাদের কে শুনতে বা দেখতে দিন যেগুলোর বিষয়বস্তু বা শিরোনাম অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং যেগুলো বস্তুবাদী মানব জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে।
২৮. আমন্ত্রণ জানানঃ সহকর্মীদের আমন্ত্রণ করে ইসলামিক আলোচনা অনুষ্ঠান এবং সভা-সেমিনারে নিয়ে যান। তাদেরকে বিভিন্ন ইসলামিক দা’ওয়াহ্ সংগঠনগুলোতেও সাথে করে নিয়ে যান।
২৯. জামা’য়াতে সালাত আদায় করুনঃ সহকর্মীদের সাথে নিয়ে অফিসে একসাথে সালাত আদায় করুন অথবা তাদেরকে সাথে নিয়ে পাশের কোন মসজিদেও সালাত আদায়ের জন্য যেতে পারেন।
৩০. ইসলামিক আচার-অনুষ্ঠানঃ বিভিন্ন সভা সমাবেশের আয়োজন করুন এবং ইসলামের দা’ঈদেরকে অনুষ্ঠানগুলোতে আমন্ত্রণ করুন। অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি ও বক্তব্য দর্শক-শ্রোতাদের মাঝে ইসলামকে জানার ব্যাপারে আগ্রহ তৈরি করবে।
৩১. উন্মুক্ত আলোচলাঃ দুপুরের খাবার কিংবা চা বিরতির সময়টা খোশগল্পে না কাটিয়ে ইসলামিক আলোচনার উপলক্ষ হতে পারে।
৩২. ইসলামিক উদ্যোগঃ ইসলামিক দা’ওয়াহ্র সাথে যারা সক্রিয়ভাবে জড়িত তাদেরকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ হাতে নিয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করুন।
৩৩. ইসলামিক দৃষ্টান্তঃ কর্তব্যপালণ এবং কর্মসম্পাদনের ক্ষেত্রে শতভাগ আন্তরিক হউন। আপনার প্রতিটি কর্মই সাধ্যমত করার চেষ্টা করুন এবং অন্যদের চোখে প্রমাণ করুন আপনি যা করেছেন একজন ভাল মুসলিম বলেই তা করেছেন। আর এভাবেই তাদেরকে বোঝান ইসলাম কিভাবে মানুষকে সত্যকার অর্থে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গোড়ে তোলে।
দাওয়াহ্র কিছু সাধারন পন্থাঃ
৩৪. দা’ওয়াহ্ পোস্টারঃ অত্যন্ত দৃষ্টি-আকর্ষক এবং নান্দনিক সৌন্দর্যের বিভিন্ন দৃশ্যাবলী ব্যবহার করে পোস্টার তৈরি করুন। সামাজিক জীবনের বিভিন্ন বাস্তবিক মুহূর্তের চিত্র তুলে ধরে সেই পরিস্থিতিতে কিভাবে দা’ওয়াহ্ দেয়া যায় তা তুলে ধরুন। পোস্টারগুলোতে মানুষের চিন্তা উদ্রেককারী ইসলামিক স্লোগান লিখে দিন এবং সেগুলোকে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টাঙানোর ব্যবস্থা করুন।
৩৫. ইসলামিক শুভেচ্ছা কার্ডঃ বিভিন্ন শুভেচ্ছাবাণী সম্বলিত কার্ড ছাপিয়ে সেগুলো বিতরণ করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক দিন কিংবা অনুষ্ঠানের তারিখ দিয়ে কার্ড ছাপিয়ে সেগুলোও বিতরণ করা যেতে পারে। কার্ডগুলোতে মনোরম অক্ষরে ইসলামে নিষিদ্ধ বিষয় যেমনঃ সুদ, ঘুষ, পরচর্চা, প্রতারণা ইত্যাদির কুফল উল্লেখ করুন।
৩৬. দা’ওয়াহ্ এ্যালবামঃ পরকাল সম্পর্কে মানুষের মনে ভীতি সঞ্চারকারী এবং তাদের মনে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে এমন সব ছবি সংগ্রহে রাখুন। ছবিগুলো আপনাদের দা’ওয়াহ্ সংগঠনের দর্শনার্থীদের জন্য ব্যবহার করুন অথবা উপহার হিসেবে সেগুলো তাদেরকে দিতেও পারেন।
৩৭. বিয়ের কার্ডঃ বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের ইসলামিক দা’ওয়াহ্ পৌঁছে দেয়ার জন্য ইসলামিক দা’ওয়াহ্র প্রচারপত্রের উল্টো পিঠ বিয়ের কার্ড হিসেবে ব্যবহার করুন। উদাহরণস্বরূপ, যে এলাকার লোকজন বিয়ের অনুষ্ঠানে অনৈসলামিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয় সে এলাকার লোকজনদের দা’ওয়াহ্ দেয়ার জন্য “ইসলামে বিয়ে অনুষ্ঠানের ‘আদাব” শীর্ষক পুস্তিকা বিয়ের কার্ড হিসেবে ব্যবহার করুন।
৩৮. টাইপিং এবং রিভিশনঃ হয়ত কোন কাউকে ইসলামের দা’ওয়াহ্ দিতে চাচ্ছেন কিন্তু সরাসরি কিছু বললে কাজ হবে না। সেক্ষেত্রে যা করতে পারেন তা হল, তাকে দিয়ে ইসলামিক কোন আর্টিকেল লেখান বা লেখা আর্টিকেল তাকে প্রুফ রিডিং এর জন্য দিন। এমনি এমনি হয়ত পড়ত না কিন্তু অনুরোধ করে কাজটি করতে বললে করবে এবং এক্ষেত্রে দুই কাজই হবে। লিখতে গিয়ে বা প্রুফ রিডিং করতে গিয়ে সে মনোযোগ দিয়ে পড়বে এবং ইসলামের দাওয়াহ্র কাজও হবে।
৩৯. মোবাইলের মাধ্যমে দাওয়াহঃ আপনার মোবাইল এবং ই-মেইল কন্ট্যাক্ট লিস্টের সকলকে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক দিন ও অনুষ্ঠানের কথা জানিয়ে এবং মনে করিয়ে দিয়ে মেসেজ পাঠান। ইসলামে দা’ওয়াহ্র গুরুত্ব উল্লেখ করে সংক্ষিপ্ত আর্টিকেল লিখে তাদের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিন। আমাদের ওয়েবসাইটের সব আর্টিকেল ইমেইল করে পাঠাতে পারেন।
৪০. ইন্টারনেট দা’ওয়াহঃ বিভিন্ন জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের সাইট যেমনঃ Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে ইসলামি প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার শেয়ার করুন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। । ইন্টারনেটে এমন অসংখ্য চ্যাট রুম/ব্লগ আছে যেগুলোতে ইসলামের কুৎসা রটনা করা হচ্ছে, ইসলামের নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এমন চ্যাট রুম/ ওয়েবসাইট গুলোতে আলোচনায় অংশ নিন এবং তাদের মিথ্যাচারকে খণ্ডন করুন।
৪১. গণমাধ্যমে দা’ওয়াহঃ রেডিও এবং টেলিভিশনের জন্য ইসলামিক অনুষ্ঠান নির্মাণ করে সেগুলো সম্প্রচারের ব্যবস্থা করুন। অনুষ্ঠানগুলো সম্প্রচারের আগেই সেগুলোর প্রচার সময় এবং চ্যানেলের নাম উল্লেখ করে ব্যপক প্রচারণা চালান। এক্ষেত্রে পূর্বোল্লিখিত পদ্ধতিতে পোস্টারের মাধ্যমে তা করতে পারেন। ফেইসবুকের সাইডবারেও আকর্ষণীয় ইমেজ ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। স্থানীয় সংবাদপত্রেও ইসলাম বিষয়ক আর্টিকেল লিখে পাঠান।
৪২. স্টিকারের মাধ্যমে দা’ওয়াহঃ সালাত আদায় করা, পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা, দুস্থদের সহায়তা করা ইত্যাদি বিষয়গুলো মানুষকে মনে করিয়ে দেয় এমন মেসেজ লিখে স্টিকার আকারে সেগুলো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ পাবলিক যানবাহন যেমনঃ বাস, ট্রেন ইত্যাদিতে লাগানোর ব্যবস্থা করুন। স্টিকারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দো’য়া যেমনঃ বাড়ীর বাইরে যাওয়ার দো’য়া, বাড়ীতে প্রবেশের দো’য়া, টয়লেটে প্রবেশের দো’য়া ইত্যাদি লিখে মানুষের মাঝে বিতরণ করুন যাতে তারা সেগুলো বাড়ীর যথাস্থানে লাগিয়ে রাখতে পারে। আবাসিক হোটেলের মালিকদের অনুমতি নিয়ে হোটেলের রুমগুলোতে সালাতের জন্য কিব্লা উল্লেখ করে আকর্ষণীয় স্টিকার লাগাতে পারেন।
৪৩. সালাত এবং সাওমের (রোজা) সময়সূচী প্রচারঃ সালাতের সময়সূচী এবং রমজান মাসে ইফতারের সময়সূচী ছাপিয়ে সেগুলোকে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাগানোর ব্যবস্থা করুন। এতে করে মুসল্লীদের এবং যারা রোজা রাখেন তাদের অনেক উপকার হবে। এতে করে সালাতের ব্যাপারে অন্যান্যদেরও স্মরণ করিয়ে দেয়া যাবে।
৪৪. দিনপঞ্জি এবং কর্মসূচীঃ গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক দিন এবং কর্মসূচীর তারিখ ইত্যাদি উল্লেখ করে আকর্ষণীয় দিনপঞ্জি ছাপিয়ে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করুন।
৪৫. কলিং কার্ডঃ বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করে ব্যালেন্স রিচার্জ কার্ডের উপরে দা’ওয়াহ্ মেসেজ লিখে সেগুলো দোকানে দোকানে সরবরাহ করার ব্যবস্থা করুন।এতে করে ব্যালেন্স রিচার্জ কার্ডের মাধ্যমেও কাস্টোমারদের কাছে ইসলামের দা’ওয়াহ্ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।
৪৬. পোস্ট কার্ডঃ প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য ব্যবহার করে আকর্ষণীয় পোস্ট কার্ড ডিজাইন করুন। পোস্ট কার্ডের উল্টো পিঠে ইসলামিক দা’ওয়াহ্ সম্পর্কিত মেসেজ লিখে সেগুলো ছাপানোর ব্যবস্থা করুন। উদাহরণস্বরূপ, কোন খেজুর বাগানের মনোরম দৃশ্যকে ব্যাকগ্রাউন্ড করে তার উপর কোরআনে বর্ণিত “পানি চক্র” সম্পর্কিত আয়াতের উদ্ধৃতি দিতে পারেন।
৪৭. দা’ওয়াহ্ ব্রিফকেইসঃ বিশেষ ধরনের একাধিক পকেট বিশিষ্ট ব্রিফকেইস কিনে তা কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করুন। একাধিক পকেটওয়ালা এমন ব্রিফকেইস বিভিন্ন ধরনের লিফলেট, পুস্তিকা, গুরুত্বপূর্ণ লেকচারের অডিও-ভিডিও সিডি/ডিভিডি ইত্যাদি বহনের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে।
৪৮. পত্রিকার চাঁদাঃ উপহার হিসেবে কাউকে ইসলামিক কোন পত্রিকার চাঁদা পরিমাণ টাকা পাঠিয়ে দিতে পারেন অথবা পত্রিকার চাঁদা পরিমাণ টাকা কোন দা’ওয়াহ্ সংগঠনকে পাঠিয়ে দিতে পারেন ফলে তারাই পত্রিকাটি গ্রাহকের কাছে উপহার হিসেবে পাঠিয়ে দেবে।
৪৯. পঠিত বই-পুস্তক এবং পত্র-পত্রিকা সংগ্রহঃ পড়া হয়ে গেছে এমন বই-পুস্তক এবং পত্র-পত্রিকা সংগ্রহের একটি উদ্যোগ হাতে নিন। সেগুলো সংগ্রহ করে এমন সব এলাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করুন যেখানকার লোকেরা সেগুলো এখনও পড়ার সুযোগ পাইনি।
৫০. পুস্তিকা-প্রচারপত্রঃ গুরুত্বপূর্ণ বই বা লেকচারে ভিডিও সিডি/ডিভিডি থেকে নির্বাচিত অংশ ছাপিয়ে পুস্তিকা বা প্রচারপত্র আকারে প্রকাশ করুন। বিভিন্ন উপলক্ষে এমনটি করা যেতে পারে। যেমনঃ হজ্ব মৌসুমে, লম্বা ছুটির ভেতরে, প্রবাসী শ্রমিকদের উপলক্ষে, বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে, রমজান মাস কিংবা ঈদ উপলক্ষে।
৫১. বিভিন্ন বিলের রশিদঃ সাধারন ব্যবহার্য বিল যেমনঃ টেলিফোন বিল, পানির বিল, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি বিলের রশিদের উল্টো পীঠে সংক্ষিপ্ত দা’ওয়াহ্ বিষয়ক বিবৃতি এবং কোরআনের উপদেশবাণী লিখে তা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিন।
৫২. ইসলামিক স্লোগানঃ মানুষের নজর কাড়ে এমন সব আকর্ষণীয় স্লোগান বা বক্তব্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমনঃ ক্যালেন্ডার, শপিংব্যাগ, গাড়ির সানস্ক্রীন ইত্যাদিতে লিখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই শপিংব্যাগ বা গাড়ীর সানস্ক্রীন এর প্রস্তুতকারক কোম্পানির অনুমতি নিতে হবে।
৫৩. খোলা চিঠিঃ বিভিন্ন বয়সের মানুষকে পাঠক হিসেবে কল্পনা করে চিঠি লিখুন। মনে করুন, আপনার চিঠির পাঠক হতে পারে মসজিদের পাশের বাড়ীর কেউ অথবা সেই মসজিদের ইমাম, কিংবা একজন পাবলিক স্পিকার, একজন ডাক্তার, একজন শিক্ষক, একজন ছাত্র, একজন প্রকাশক, একজন বাবা, একজন মা, একজন স্বামী, একজন স্ত্রী, একজন চাকুরিদাতা, একজন ব্যবসায়ী, একজন ভোক্তা/ক্রেতা, একজন নিরাপত্তা প্রহরী, একজন কারাবন্দী কয়েদী অথবা একজন মুসাফির। আপনার পাঠককে উদ্দেশ্য করে তার অনুভূতিতে নাড়া দেয় এমন ভাষায় তাকে ইসলামের পথে ডাকুন।
৫৪. সাধারন প্রতিযোগিতাঃ বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক সাধারন জ্ঞানের প্রতিযোগিতা আয়োজন করুন। এক্ষেত্রে প্রতিযোগীদের বয়সের কথা মাথায় রেখে বয়সের সাথে মানানসই বিভিন্ন ইসলামিক পুরস্কার দেয়ার ব্যবস্থা করুন। পুরুস্কার হিসেবে বিজয়ীদের মধ্যে ইসলামিক বই, লেকচারের সিডি-ভিসিডির সিডি/ডিভিডি ইত্যাদি বিতরণ করুন।
৫৫. সাধারন প্রকাশনাঃ আগে হয়ত ইসলাম মেনে চলত না অথবা বিপথে চলে গিয়েছিল পরে আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন হেদায়াত দান করেছেন এমন মানুষদের গল্প বা তাদের স্বীকারোক্তিমূলক কথাকে গল্প আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা করুন। এধরনের প্রকাশনায় নিয়মিত বিভাগ হিসেবে আরো যা থাকতে পারে তা হল কবিতা, নাটক, ছোট গল্প, ভাষাতাত্ত্বিক আলোচনা, বিখ্যাত লোকদের জীবনী, আন্তর্জাতিক রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট, আধুনিক ব্যবসা-বাণিজ্য এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন অবদান ও আবিস্কারের উপর প্রবন্ধ। প্রকাশনায় এসকল বিভাগ রাখার উদ্দেশ্য হল সেসব পাঠকদের ধরে রাখা যারা হয়ত পুরোপুরি ইসলামিক পত্রিকা পড়তে আগ্রহী নন।
৫৬. বিভিন্ন দা’ওয়াহ্ উপকরণ বিতরণঃ ইসালামের দা’ওয়াহ্ পৌঁছে দেয়ার কাজে নিয়োজিত সংগঠনগুলো নিয়ম করে সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে দা’ওয়াহ্ বিষয়ক পুস্তিকা, ক্রোড়পত্র, লেকচারের সিডি-ভিসিডি ইত্যাদি পৌঁছে দিতে পারে। এমন কাজ স্কুলগুলোতেও করা যেতে পারে।
৫৭. প্রোডাকশন কোম্পানীঃ বড় ধরনের অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজন করে থাকে এমন কমিউনিটি সেন্টার বা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। তাদের সহযোগিতায় উপস্থিত অতিথিদের মাঝে দা’ওয়াহ্ উপকরণ যেমনঃ দা’ওয়াহ্ পুস্তিকা, বিখ্যাত বক্তাদের আকর্ষণীয় লেকচারের সিডি-ভিসিডি ইত্যাদি বিতরণের ব্যবস্থা করুন।
৫৮. দা’ওয়াহ্র কাজে ব্যবহারের জন্য গাড়ীঃ দা’ওয়াহ্র কাজে ব্যবহারের জন্য হালকা দামের খোলা জীপ গাড়ী কিনতে পারেন। গাড়ীতে দা’ওয়াহ্ বিষয়ক এবং উৎসাহমূলক শব্দগুচ্ছ বা বাক্য লিখে দিন। জনসমাগম বেশী হয় এমন জায়গায় গাড়ী পার্ক করে লোকজনের মাঝে পূর্বোল্লিখিত দা’ওয়াহ্ উপকরণ যেমনঃ দা’ওয়াহ্ পুস্তিকা, বিখ্যাত বক্তাদের আকর্ষণীয় লেকচারের সিডি-ভিসিডি ইত্যাদি বিতরণ করুন।
৫৯. বিশালাকৃতির বিল বোর্ডঃ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ন বিজ্ঞাপন বা বিল বোর্ড টাঙিয়ে সেগুলোতে দা’ওয়াহ্ মেসেজ এবং ইসলামিক অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেয়ার ব্যবস্থা করুন। বিশালাকৃতির বিল বোর্ডগুলো সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হবে। আজকাল রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন প্রসাধনী পণ্যের কুরুচিপূর্ণ বিজ্ঞাপনের জায়গায় ইসলামিক বিল বোর্ড দেখা গেলে তা লোকজনের মাঝে বৈপ্লবিক সাড়া জাগাবে।
৬০. ক্রীড়ানুষ্ঠানের আয়োজনঃ দা’ওয়াহ্ সংগঠনগুলো কিশোর এবং যুবকদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন শারীয়াহ্ সম্মত খেলাধুলার আয়োজন করতে পারে। এমন অনুষ্ঠানগুলোতে বিজয়ীদেরসহ দর্শকদের মাঝে দা’ওয়াহ্ সংশ্লিষ্ট উপকরণ পুরস্কার হিসেবে বিতরণ করা যেতে পারে।
৬১. বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানঃ ইসলামের জন্য কাজ করতে আগ্রহী এমন ডাক্তারদের দিয়ে কোন সমমনা প্রাইভেট ক্লিনিকের অধিনে সাধারন মানুষদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করুন। এক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের মানুষদের সুবিধা দেয়া যেতে পারে। যেমনঃ নতুন মুসলিম হয়েছে অথবা যারা ইসলাম গ্রহনে আগ্রহী ইত্যাদি।
৬২. মহিলাদের জন্য কোর্সের আয়োজনঃ মহিলাদের উদ্দেশ্যে এমন সব কল্যাণধর্মী কোর্সের আয়োজন করুন যে ব্যাপারে তারা স্বভাবতই তারা আগ্রহ বোধ করে। যেমনঃ রান্না-বান্না, গারাস্থ্য অর্থনীতি, সন্তান প্রতিপালন, দাম্পত্য জীবন, গৃহ ব্যবস্থাপনা, গৃহকর্ম ও গৃহকর্মী, দাম্পত্য প্রস্তুতি, স্তন্যদান, শিশুদের রোগবালাই, গৃহ নিরাপত্তা, প্রাথমিক চিকিৎসা ইত্যাদি। এইসব কোর্সের পাঠ্যসূচীর বই-পুস্তকের ভিতর দা’ওয়াহ্ বিষয়ক মেসেজ সন্নিবেশ করুন।
৬৩. সাহায্য মেলাঃ তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে “চ্যারিটি ফেয়ার”, “চ্যারিটি ফীস্ট” ইত্যাদি নামে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা ইসলামিক দা’ওয়াহ্ কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে তাদের সাধ্যমত আর্থিক অনুদান দেয়ার চেষ্টা করবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা নারী বিষয়ক ইসলামিক বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে পারেন।
৬৪. সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানঃ ইসলামিক স্কলার, দা’ঈ, দা’ওয়াহ্ সংগঠন, ইসলামিক পত্রিকা, ইসলামিক ওয়েবসাইট, ইসলামিক সিডি-ভিসিডির দোকান ইত্যাদি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের নিজ নিজ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মাননা পদক প্রদান উপলক্ষে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন। অনুষ্ঠানে ইসলামে দা’ওয়াহ্র গুরুত্ব তুলে ধরে উপস্থিত সাধারনের জন্য বক্তব্যের ব্যবস্থা রাখুন। এতে করে সাধারন মানুষ দা’ওয়াহ্র গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হবে।
৬৫. দা’ওয়াহ্ নির্দেশিকাঃ দেশে বেড়াতে আসা বিদেশী পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে দা’ওয়াহ্ গাইড বা ট্যুরিষ্ট গাইড প্রকাশ করুন। এই গাইডে যেসব বিষয় স্থান পেতে পারে তা হল বিভিন্ন জায়গার ইসলামিক সংগঠন বা দা’ওয়াহ্ সংগঠনের ঠিকানা, ইসলামিক গ্রন্থাগার, স্টুডিও, বিখ্যাত মসজিদ, ইসলামিক স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকেশন, বর্তমানে অনুষ্ঠিতব্য দা’ওয়াহ্ কনফারেন্স এর সময়সূচী, স্থানীয় ইসলামিক বিশেষজ্ঞদের ঠিকানা ইত্যাদি।
৬৬. ইসলামিক প্রদর্শনীঃ সংস্কৃতি ও পর্যটন বিভাগের সহায়তায় বড় বড় ইসলামিক বুকস্টল এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনকে নিয়ে ইসলামিক প্রদর্শনীর আয়োজন করুন। এমন প্রদর্শনীতে ইসলামিক দা’ওয়াহ্ কার্যক্রমের সাথে সমমনা স্কুল-কলেজ এবং বিভিন্ন কোম্পানির স্টল থাকবে যেখানে তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর এমন কিছু তুলে ধরবে যা ইসলামিক দা’ওয়াহ্র প্রচার-প্রসারে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।
৬৭. দা’ওয়াহ্ ওয়েবসাইটঃ দা’ওয়াহ্ কার্যক্রম চালানোর জন্য সব রকম চাহিদা মেটাতে পারে এমন দা’ওয়াহ্ ওয়েবসাইট নির্মাণ করুন। এই ধরনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সবরকম দা’ওয়াহ্ উপকরণ সরবরাহ করা হবে। ফলে ওয়েবসাইটগুলো ইসলামিক বিশেষজ্ঞ বোর্ড এর ন্যায় ভুমিকা পালন করবে। এখানে দা’ওয়াহ্ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আলোচনাও স্থান পাবে। দা’ওয়াহ্ বিষয়ক প্রশ্নোত্তর সেকশনও থাকবে।
৬৮. ইফ্তার পার্টি আয়োজনঃ দা’ওয়াহ্ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রমজান মাসে ইফ্তার পার্টির আয়োজন করুন এবং অন্যান্যদের ইফ্তার পার্টিতে অংশগ্রহণ করুন। ইফ্তার অনুষ্ঠানে সাওম বা রোজার অসাধারণ উপকারিতা এবং আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্য এর তাৎপর্য তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিন। অথবা সপ্তাহের যে কোন দুটি দিনকে নির্ধারণ করে ঐ দিনগুলোতে অন্যান্য যারা দা’ওয়াহ্র কাজ করছে তাদের সাথে মিলিত হয়ে পারস্পারিক মতবিনিময়ের অয়োজন করুন। এ কাজটি সারা বছর ধরেই চালিয়ে যান।
৬৯. হজ্ব এবং ‘উমরাঃ হজ্ব অথবা উমরা করতে যাচ্ছেন এমন মানুষদের এবং বিশেষ করে নতুন মুসলিমদের হজ্ব সফর সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে যথা সম্ভব সহায়তা করুন। ইসলামের দা’ওয়াহ্র কাজে
তাদের স্পৃহাকে উজ্জীবিত রাখার উদ্দেশ্যে হজ্বের পূর্বে, হজ্ব পালনের সময় এবং হজ্ব পরবর্তী কি ধরনের ভুমিকা তাদের হওয়া উচিৎ তা তুলে ধরে হজ্ব গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করুন।
৭০. যাতায়াত যানবাহনঃ অনেকেই দূরবর্তী কোন ইসলামিক অনুষ্ঠান, অথবা কোন দা’ওয়াহ্ অফিসের কোন কোর্সে যোগদানের জন্য যেতে চান কিন্তু যাতায়াত সুবিধা না থাকায় যেতে পারেন না। এক্ষেত্রে আপনি ইসলামের স্বার্থে নিজের গাড়ীতে করে এবং একটু সময় খরচ করে এমন লোকজনকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিন।
৭১. দা’ওয়াহ্ বিপণীঃ বিভিন্ন জায়গায় দা’ওয়াহ্ বিপণী স্থাপন করুন। এই বিপণীগুলো বিভিন্ন দা’ওয়াহ্ উপকরণ সংগ্রহের কাজ করবে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ দা’ওয়াহ্ উপকরণ হিসেবে ইসলামিক বই-পুস্তক, সিডি-ভিসিডি’র কপি ইত্যাদি দিতে চাইলে সেগুলো গ্রহন করবে। সংগৃহীত দা’ওয়াহ্ উপকরণগুলো নামমাত্র দামে মসজিদ-মাদ্রসা এবং স্কুল-কলেজগুলোতে সরবরাহ করতে হবে।
৭২. দা’ওয়াহ্ কার্যালয়ঃ স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন দা’ওয়াহ্ কার্যালয় স্থাপন করুন। অন্যান্যদেরও কার্যালয়গুলোতে নিয়ে যান। কার্যালয়গুলোর বিভিন্ন প্রোগ্রামে শরিক হউন। যারা সেখানে ইসলামের দা’ওয়াহ্র কাজে নিয়োজিত আছেন তাদের সহায়তা করুন, উৎসাহ দিন।
৭৩. মানুষের জন্য দো’য়া করুনঃ মানুষকে ইসলামের পথে ডাকার অংশ হিসেবে তাদের জন্য বিভিন্ন সময়ে দো’য়া করুন। যেমনঃ হয়ত কাউকে কোন হারাম কাজে লিপ্ত হতে দেখলে তাকে বলুন, “আল্লাহ্ আপনাকে জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজত করুন।” অথবা কেউ কোন ভাল কাজ করলে তার জন্য বলুন, আল্লাহ্র কাছে দো’য়া করি তিনি যেন আমাদের সবাইকে জান্নাতে তাঁর রাসূলের (সা) কাছাকাছি রাখেন।” অথবা কোন ছাত্রের জন্য দো’য়া করলে বলুন, “আল্লাহ্ আপনাকে ইহকাল এবং পরকালের উভয় পরীক্ষায় সাফল্য দান করুন।”
৭৪. ব্যক্তিগত সাক্ষাৎঃ সালাত আদায়ের ব্যপারে উদাসীন বা একবারেই সালাত আদায় করে না এমন লোকদের সাথে সরাসরি দেখা করুন। আযানের সময় হয়ে এসেছে এমন সময় তাদের সাথে দেখা করুন যাতে করে তাদেরকে সাথে নিয়ে মসজিদে যেতে পারেন।
৭৫. ইসলাম গ্রহণের ঘোষণাঃ সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী মুসলিমদের জুম’আর মসজিদে নিয়ে আসুন। সালাত শেষে তাদের মুখ থেকেই শুনুন কিভাবে বা কেন তারা ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিল। ইসলামের কোন কোন দিক তাদেরকে বেশী আকর্ষণ করেছে। তাদের কাছ থেকে শোনার পর উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে দা’ওয়াহ্র বিভিন্ন উপায় তুলে ধরে কিছু বলুন যা তাদের কাজে আসবে। ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি কোন মহিলা হলে তাকে কোন গার্লস স্কুল বা কোন মহিলা সংস্থায় নিয়ে যান এবং সেখানে তার ম্নুখ থেকে ইসলাম গ্রহণের কাহিনী শুনুন । এতে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবে।
৭৬. সাধারণ যানবাহনঃ আকর্ষণীয় এবং প্রাসঙ্গিক পোস্টার, স্টিকার, অডিও সিডি/ডিভিডি ইত্যাদি ছাপিয়ে এবং তৈরি করে বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট যানবাহনের মালিক সমিতির কাছে সরবরাহ করুন। এগুলো তারা তাদের বাস, প্রাইভেট কার, মোটর বা ট্যাক্সি ক্যাব ইত্যাদিতে ব্যবহার করবে। মাঝে মাঝে ইসলামিক দা’ওয়াহ্র কাজে সহযোগিতার জন্য তাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন।
৭৭. দা’ওয়াহ্ বুথঃ শহরের বড় বড় শপিং মল, সুপার মার্কেট এলাকা, নিউমার্কেট এলাকা ইত্যাদি যে স্থানগুলোতে প্রচুর জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলোতে দা’ওয়াহ্ বুথ স্থাপন করুন। এই দা’ওয়াহ্ বুথ বা দা’ওয়াহ্ স্টলগুলোর টেবিলে দা’ওয়াহ্ বিষয়ক ক্লিপ্স দেখানোর জন্য রাখতে হবে বড় পর্দার টেলিভিশন। সাথে থাকবে নজরকাড়া প্রচ্ছদের সব দা’ওয়াহ্ সংশ্লিষ্ট ইসলামিক বই-পুস্তক, দা’ওয়াহ্ পত্রিকা, অডিও ক্যাসেট, ভিডিও, সিডি, ভিসিডি ইত্যাদির অনন্য সমাহার যা উপস্থিত দর্শনার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হবে।
৭৮. টেলিফোন দা’ওয়াহঃ আপনার মোবাইল বা টেলিফোনের ওয়েলকাম টিউন হিসেবে বিভিন্ন দা’ওয়াহ্ মেসেজ ব্যবহার করুন। কোন কলার আপনাকে কল করলে তিনি তা শুনতে পাবেন। ফোনকলটি রিসিভ না করা পর্যন্ত কলার মেসেজটি শুনতে থাকবেন। ওয়েলকাম টিউনটি হতে পারে, “সম্মানিত কলার, আপনি আজকে সালাত আদায় করেছেন তো? কারণ সালাতই হল একজন কাফির ও মুসলিমের মধ্যে পার্থক্যকারী বিষয়।” এছাড়া মোবাইল এবং টেলিফোনের মাধ্যমে দাওয়াহ্ সেন্টার থেকে লোকজন বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জেনে নিতে পারেন।
৭৯. আরবি ভাষা শিক্ষা কোর্সঃ আরবি ভাষা শিক্ষা কোর্স চালু করুন। এই কোর্সগুলো কথোপকথনমূলক (কনভারসেশনাল) আরবি ভাষা এবং আরবি ব্যকরনের উপর গুরুত্ব দিতে পারে। এক্ষেত্রে আরবি ব্যকরনের জ্ঞান কোরআন বুঝে পড়তে সাহায্য করবে। সরাসরি কোর্সের বদলে ধারণকৃত ক্লাস লেকচার প্রোজেক্টরে দেখানোর মাধ্যমেও আরবি ভাষা শেখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কাজটি নিজের বাড়ী কিংবা কর্মক্ষেত্রে যেখানে সুবিধা করা যেতে পারে।
৮০. ইসলামিক কোর্সঃ তাওহীদ, শির্ক, বিদ্য়া’হ্, হালাল-হারাম, ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্য, ইসলামে দাম্পত্য জীবন, ইসলামে নারী অধিকার, বিয়ে অনুষ্ঠানের ‘আদব ইত্যাদিসহ আকীদাহ্গত বিভিন্ন বিষয়ের উপর ইসলামিক কোর্সের আয়োজন করুন। কোর্সগুলো স্থানীয় মসজিদ বা দা’ওয়াহ্ সংগঠনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। এছাড়া যারা ইসলামের দা’ঈ হিসেবে কাজ করতে চাই তাদের জন্য দা’ওয়াহ্ ট্রেনিং কোর্সের আয়োজন করুন।
৮১. দা’ওয়াহ্ দিবসঃ উন্মুক্ত দা’ওয়াহ্ দিবসের আয়োজন করুন এবং এতে বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা রাখুন। অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষ, দেশী-বিদেশী সকলশ্রেণীর মানুষদের জন্য সুব্যবস্থা রাখুন। দা’ওয়াহ্ দিবস অনুষ্ঠানের একমাস আগে থেকেই স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ সকল জায়গায় মৌখিক ঘোষণা এবং পোস্টারের মাধ্যমে প্রচারনা চালিয়ে তা সকলকে জানিয়ে দিন যাতে করে দা’ওয়াহ্ দিবসের আয়োজন মানুষের মুখে মুখে প্রচার লাভ করে।
পরিশেষে, আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের কাছে আমরা এই দো’য়া করি তিনি যেন আমাদের প্রত্যেককে তাঁর দ্বীনের দা’ঈ হিসেবে কবুল করে নেন এবং তাঁর জান্নাতে আমাদেরকে সেই সমস্ত সৎকর্মশীলদের পাশে স্থান দেন যারা তাঁর দ্বীনকে সঠিকভাবে পালন করে গেছেন।